Thursday, June 12, 2025

পুরুষ নির্যাতন Palash Dip

বাংলাদেশে 'পুরুষ নির্যাতন


দমন আইন' নামে কোনো সুনির্দিষ্ট বা পৃথক আইন নেই, যেমনটি 'নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন, ২০০০' রয়েছে। তবে, এর অর্থ এই নয় যে পুরুষরা নির্যাতনের শিকার হলে আইনের আশ্রয় নিতে পারবেন না। বাংলাদেশের প্রচলিত কিছু সাধারণ আইন এবং কিছু বিশেষ আইনের ধারার মাধ্যমে পুরুষরা বিভিন্ন ধরনের নির্যাতনের জন্য প্রতিকার চাইতে পারেন_PalashDip

পুরুষদের নির্যাতনের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হতে পারে এমন কিছু আইন ও ধারা নিচে উল্লেখ করা হলো:(Palash Dip)
১. দণ্ডবিধি, ১৮৬০ (The Penal Code, 1860):
* শারীরিক নির্যাতন: যদি কোনো পুরুষ শারীরিক নির্যাতনের শিকার হন, তাহলে দণ্ডবিধির বিভিন্ন ধারায় মামলা করতে পারেন। যেমন:
* ধারা ৩২৩ (স্বেচ্ছায় আঘাত করা): সাধারণ আঘাতের জন্য।
* ধারা ৩২৫ (গুরুতর আঘাত করা): গুরুতর আঘাতের জন্য।
* ধারা ৩০৭ (হত্যার চেষ্টা): হত্যার চেষ্টার জন্য।
* ধারা ৩২৬ (মারাত্মক অস্ত্র দিয়ে গুরুতর আঘাত): ধারালো অস্ত্র বা অন্য কোনো মারাত্মক বস্তুর দ্বারা গুরুতর আঘাত করার জন্য।
* যৌন নির্যাতন/বলাৎকার: দণ্ডবিধির ৩৭৭ ধারা (প্রকৃতিবিরুদ্ধ অপরাধ) পুরুষদের যৌন নির্যাতনের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হতে পারে, যদিও এই ধারাটি সমকামিতা এবং অপ্রাকৃতিক যৌনকর্মকে মূলত নির্দেশ করে। তবে, সাম্প্রতিককালে উচ্চ আদালত কিছু ক্ষেত্রে ছেলেশিশুদের বলাৎকারকে ধর্ষণের সমতুল্য বিবেচনা করেছেন, যদিও দণ্ডবিধির ৩৭৫ ধারা (ধর্ষণ) কেবল নারীর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। পুরুষ ধর্ষণের শিকার হলে সুনির্দিষ্ট আইনের অভাবে প্রতিকার পেতে জটিলতা দেখা যায়।
* মিথ্যা মামলা: যদি কোনো পুরুষ মিথ্যা মামলা, বিশেষ করে নারী নির্যাতন দমন আইনে দায়ের করা মিথ্যা মামলার শিকার হন, তাহলে দণ্ডবিধির ১৯৩ (মিথ্যা সাক্ষ্য দেওয়া), ২১১ (ক্ষতিসাধনের উদ্দেশ্যে মিথ্যা অভিযোগ) বা ২১০ (মিথ্যা মামলা করা) ধারায় প্রতিকার চাইতে পারেন।(Palash Dip)
২. পারিবারিক সহিংসতা (প্রতিরোধ ও সুরক্ষা) আইন, ২০১০:
* এই আইনটি মূলত নারী ও শিশুদের পারিবারিক সহিংসতা থেকে সুরক্ষার জন্য প্রণীত হলেও, এর কিছু ব্যাখ্যায় সহিংসতা বলতে শারীরিক, মানসিক, যৌন, অর্থনৈতিক – সব ধরনের নির্যাতনকে বোঝানো হয়েছে। এই আইনের "ব্যথিত ব্যক্তি" (aggrieved person) এর সংজ্ঞায় নারী ও শিশুর কথা বলা হলেও, কিছু ক্ষেত্রে পুরুষরাও মানসিক বা অর্থনৈতিক সহিংসতার শিকার হলে এর আওতাভুক্ত হতে পারেন এমন বিতর্ক রয়েছে। তবে, আইনটির মূল লক্ষ্য নারী ও শিশু হওয়ায় পুরুষদের জন্য এটি সরাসরি এবং পূর্ণাঙ্গ সমাধান দেয় না।@PalashDip
৩. ফৌজদারী কার্যবিধি, ১৮৯৮ (The Code of Criminal Procedure, 1898):
* যেকোনো ফৌজদারি অপরাধের জন্য থানায় এজাহার (FIR) দায়ের করা যায়। যদি পুলিশ মামলা নিতে না চায়, তাহলে একজন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে নালিশি মামলা (Complaint Case) দায়ের করা যায়। পুরুষরাও এই সাধারণ আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ করে তাদের বিরুদ্ধে সংঘটিত অপরাধের জন্য বিচার চাইতে পারেন।
পুরুষ নির্যাতনের ক্ষেত্রে বিদ্যমান চ্যালেঞ্জ ও সীমাবদ্ধতা:
* সুনির্দিষ্ট আইনের অভাব: বাংলাদেশে নারী ও শিশুদের জন্য যেমন সুনির্দিষ্ট আইন আছে, পুরুষদের জন্য তেমন কোনো পৃথক 'পুরুষ নির্যাতন দমন আইন' নেই। ফলে পুরুষ নির্যাতনের শিকার হলে তাদের সাধারণ ফৌজদারি আইনগুলোর ওপর নির্ভর করতে হয়, যা অনেক সময় পর্যাপ্ত হয় না বা প্রতিকার পেতে জটিলতা সৃষ্টি করে।
* সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি ও ট্যাবু: পুরুষরা নির্যাতিত হলে, বিশেষ করে পারিবারিক বা মানসিক নির্যাতনের শিকার হলে, সমাজে তা সহজে স্বীকার করা হয় না। পুরুষদের "শক্তিশালী" হিসেবে দেখার প্রবণতার কারণে তারা নির্যাতনের শিকার হলেও অনেক সময় লজ্জা বা সামাজিক সম্মানের ভয়ে আইনের আশ্রয় নিতে দ্বিধা করেন।
* ধর্ষণের সংজ্ঞায় সীমাবদ্ধতা: দণ্ডবিধির ৩৭৫ ধারায় ধর্ষণের যে সংজ্ঞা দেওয়া হয়েছে, তা শুধু নারীর ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। ফলে পুরুষ, বিশেষ করে প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষরা ধর্ষণের শিকার হলে সরাসরি এই ধারায় মামলা করতে পারেন না।
* মিথ্যা মামলার অপব্যবহার: অনেক ক্ষেত্রে নারী নির্যাতন দমন আইনের অপব্যবহার করে পুরুষদের বিরুদ্ধে মিথ্যা বা হয়রানিমূলক মামলা দায়ের করা হয়। যদিও মিথ্যা মামলার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার বিধান আছে, তবে সেই প্রক্রিয়া অনেক দীর্ঘ ও জটিল।
প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ:
অনেক মানবাধিকার কর্মী এবং বিভিন্ন পুরুষ অধিকার সংগঠন দীর্ঘদিন ধরে পুরুষ নির্যাতন প্রতিরোধে একটি সুনির্দিষ্ট আইন প্রণয়নের দাবি জানিয়ে আসছে। এর ফলে পুরুষরাও তাদের বিরুদ্ধে সংঘটিত যেকোনো অপরাধের জন্য যথাযথ আইনি প্রতিকার পেতে পারবে এবং সমাজে জেন্ডার সমতা নিশ্চিত হবে।
পরিশেষে বলা যায়, বাংলাদেশের আইনে পুরুষ নির্যাতনের জন্য সরাসরি কোনো পৃথক আইন না থাকলেও, প্রচলিত কিছু আইনের মাধ্যমে আংশিক প্রতিকার পাওয়ার সুযোগ রয়েছে। তবে, একটি সুনির্দিষ্ট আইনের অভাব এবং সামাজিক ট্যাবু পুরুষদের আইনি আশ্রয় নেওয়ার ক্ষেত্রে বড় বাধা।@palashdip
Palash Dip
Inspector
Bangladesh Police
#আইন #police #life #palashdip #আদালত

0 comments:

Post a Comment